সম্পাদকীয়- বরাবরের মতো গোটা জাতি আজ শোক ও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে অবনতচিত্তে স্মরণ করছে একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্টতম সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
জাতীয় শোক দিবস রক্তেস্নাত ১৫ আগস্ট আজ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই কলঙ্কিত রাতে সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছু সদস্যের হাতে সপরিবারে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৫ আগস্টের ঘটনা ছিল মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত দেশি-বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্রের ফলশ্রুতি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের আন্তর্জাতিক শক্তির পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে তারা প্রকারান্তরে বাঙালি জাতির আত্মাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। ইয়াজিদের হাতে হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ও মীরজাফরের ষড়যন্ত্রে নবাব সিরাজউদ্দৌলার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের মতো ১৫ আগস্টও ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এ ঘটনার মাধ্যমে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি জাতির ঘাড়ে চেপে বসে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্ব ইতিহাসের এক মহানায়ক। সেরা মুক্তিসংগ্রামী, সেরা রাষ্ট্রনায়ক। জননন্দিত নেতা হিসেবে তার তুলনা তিনি নিজেই। দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা ও দায়বোধ তাকে মহীরুহে পরিণত করেছিল। ব্যক্তি শেখ মুজিব হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু। বাঙালি জাতি, বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। চার দশক আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অস্তিত্বের শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে প্রকারান্তরে এ দেশের স্বাধীনতাকেই হত্যা করতে চেয়েছিল। ১৫ আগস্টের ঘটনা জাতীয় রাজনীতিতে অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা পরিবর্তনের যে কালো অধ্যায়ের সূচনা করে তার পরিণতিতে বার বার বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতা ও দ্বিজাতিতত্ত্বের বিভেদ নীতিকে বাংলাদেশের মানুষ কবর দিয়েছিল। তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়াস চলে ১৫ আগস্টের পর থেকে। এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে তারা কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। বাংলাদেশের মানুষ খুনিচক্র এবং তাদের দোসরদের সে ষড়যন্ত্র সফল হতে দেয়নি। ১৯৯৬ সালে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয় দেশবাসীর প্রত্যাশার পরিপূরক হিসেবে। ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং খুনিদের পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ৪১ বছর আগে প্রাণ হারিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির এজেন্টদের হাতে। এ বছর আমরা এমন এক সময় জাতীয় শোক দিবস পালন করছি, যখন যুদ্ধাপরাধের বিচার এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমাদের বিশ্বাস, এ বিচার সাম্প্রদায়িক রাজনীতির চির অবসান ঘটিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনি ও তার সহযোগীদের পুনরুত্থানের পথ রোধ করবে। ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকীতে চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধুর অমর স্মৃতির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও অভিবাদন।